(মুক্তিযুদ্ধে দেশি ও বিদেশি সহযোগিতা) যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নীতি ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। প্রথমদিকে অস্ত্র এবং সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানকে সহায়তা করে। তবে নিজ দেশের বিরোধী দলের চাপে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারতে অবস্থানরত বাঙালি শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রচণ্ড ভারত-বিরোধী ও পাকিস্তান-ঘেঁষা নীতি অনুসরণ করতে থাকে। স্বভাবতই তাদের ভূমিকা বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়। 


      এডওয়ার্ড কেনেডির শরণার্থী শিবির পরিদর্শন


এ সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সমর্থনে ভারত মহাসাগরে তাদের সপ্তম নৌবহর পাঠায়। সোভিয়েত ইউনিয়নও পাল্টা নৌবহর পাঠায়। তবে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করে শেষ পর্যন্ত তারা সে নৌবহরকে কাজে লাগায় নি। পাকিস্তানের পরাজয়ের মুখে যুদ্ধ বিরতি ঘটিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বাধাগ্রস্ত করতেও জাতিসংঘে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের অনেক সদস্য, বিভিন্ন সংবাদপত্র, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সর্বস্তরের জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা পালন করে।


১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু হওয়ার সময় থেকে বিদেশি সাংবাদিকরা পাকিস্তানিদের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। তারাই প্রথম বহির্বিশ্বে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও বর্বরতার খবর ছড়িয়ে দেয়। সাইমন ড্রিং এরকমই একজন সাংবাদিক। ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সরকার কিছু বিদেশি সাংবাদিককে নিয়ন্ত্রিতভাবে বাংলাদেশের কোনো কোনো এলাকা সফর করিয়ে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন লেখানোর ফন্দি আঁটে। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। নিজ চোখে সব দেখে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা সম্পর্কে অবহিত হয় এবং সত্য কথা লিখে পত্রিকা ও বেতারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে তা অবহিত করে। এভাবে এন্থনি ম্যাসকারেনহাস গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের চাঞ্চল্যকর তথ্য সারা বিশ্বে প্রকাশ করেন। বিবিসির সাংবাদিক মার্ক টালি পুরোটা সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে খবর প্রচার করে গেছেন। এদিকে দেশে অবরুদ্ধ থেকেও অনেক বাঙালি সাংবাদিক ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে খবর পাঠিয়েছেন। এজন্য তাদের শত্রুর হাতে চরম মূল্যও দিতে হয়। একাত্তরের শহিদ নিজামউদ্দিন ও নাজমুল হক এরকমই দুজন সাংবাদিক। এছাড়া আকাশবাণী, বিবিসি, ভোয়া প্রভৃতি বেতারকেন্দ্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিল। আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রতি রাতে প্রচারিত সংবাদ পরিক্রমা' খুবই জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল। এটি পাঠ করে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে উঠেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ‘বজ্রকণ্ঠ’ ও ‘চরমপত্রসহ’ বিভিন্ন অনুষ্ঠান শ্রোতাদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছে।

Shahariar Islam

Hi, I am Shahariar. I try to write something new that no one has written before. A student that likes to learn something new all the time.

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post